No Internet Connection !

বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবীর এম. এ. জি. ওসমানী
স্যার জগদীশচন্দ্র বসু
নবাব সলিমুল্লাহ
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ
এফ. আর. খান
সার্জেন্ট জহুরুল হক
হাজী শরীয়ত উল্লাহ
তিতুমীর
আবু সাঈদ চৌধুরী
নওয়াব ফয়জুননেসা চৌধুরানী
অমর্ত্য সেন
কাজী নজরুল ইসলাম
আবদুল গাফফার চৌধুরী
এ্যাঞ্জেলা গোমেজ
কায়কোবাদ
গোলাম মোস্তফা
ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন
আব্বাস উদ্দিন আহমদ
আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দীন
জহির রায়হান
জীবনানন্দ দাশ
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
মীর মশাররফ হোসেন
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
শহিদুল্লাহ কায়সার
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
সৈয়দ আলী আহসান
খান জাহান আলী
কামরুল হাসান
হীরালাল সেন
আরজ আলী মাতুব্বর
ব্রজেন দাশ
সত্যজিৎ রায়
শওকত ওসমান
জসীম উদ্দীন
ড. মুহম্মদ ইউনূস
বেগম সুফিয়া কামাল
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
অতীশ দীপঙ্কর

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০ -১৯৭৬)
✅ মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে সিরাজগঞ্জ জেলার ধানগড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ ১৯১৯ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১০ মাস কারাবরণ করেন।
✅ ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ভাসানচরে কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন, যা থেকে তার নামের সাথে “ভাসানী” যুক্ত হয়।
✅ ১৯৪৯ সালে তিনি বাংলাদেশ মুসলিম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত হয়।
✅ ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভাপতিত্ব করেন।
✅ ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যেখানে মুসলিম লীগের পরাজয় ঘটে।
✅ ১৯৫৭ সালে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন, যা সমাজতান্ত্রিক ও কৃষক-শ্রমিক স্বার্থের পক্ষে অবস্থান নেয়।
✅ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
✅ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।​
✅ মাওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২)
✅ বরিশাল জেলার চাখারে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৮৭৩ সালে ফজলুল হক জন্মগ্রহণ করেন।
✅ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ও আইন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন।
✅ তিনি ছিলেন প্রথম মুসলিম যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য নির্বাচিত হন।
✅ ১৯১৩: কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র হন।
✅ ১৯৩৫-১৯৪৩: অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
✅ ১৯৩৭ সালে ভারতের লক্ষ্ণৌতে মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক সম্মেলনে তিনি উর্দুতে জ্বালাময়ী ভাষণ দেয়ার পর তাকে “শেরে বাংলা” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
✅ ১৯৫৪: যুক্তফ্রন্ট গঠন ও নির্বাচনে ভূমিকা পালন করেন এবং পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হন।
✅ স্মরণীয় উক্তি: "লাঙল যার জমি তার"।
✅ ১৯৬২ সালের ১৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩)
✅ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পশ্চিম বঙ্গের মেদিনিপুর জেলায় ১৮৯২ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ তিনি “গণতন্ত্রের মানসপুত্র” নামে পরিচিত ছিলেন।
✅ কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শেষে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জন করেন।
✅ ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত বাংলার সাম্য ও স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রী, ১৯৪৩ সালে খাদ্যমন্ত্রী এবং ১৯৪৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
✅ ১৯৫৩ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দিয়ে পরে দলটিকে “আওয়ামী লীগ” নাম দেন এবং এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
✅ ১৯৫৬: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি প্রধানমন্ত্রী।
✅ “লাহোর প্রস্তাব”-এর ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন, এবং ছয় দফার পটভূমি গঠনে তাঁর নীতিগত ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
✅ তিনি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক গুরু ও প্রেরণা।
✅ তাঁর মৃত্যুর পর শেখ মুজিব বলেছিলেন, "গণতন্ত্রের শেষ প্রদীপটিও নিভে গেল।"
✅ ১৯৬৩ সালের ৫ই ডিসেম্বর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫)
✅ ১৭ মার্চ ১৯২০, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
✅ ১৯৪০: মুসলিম ছাত্রলীগের সদস্য হন।
✅ ১৯৪৯: পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা।
✅ ১৯৫২: ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কারণে কারাবরণ।
✅ ১৯৬৬: ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা — "বাঙালির মুক্তির সনদ"।
✅ ১৯৬৮: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত, জনগণের আন্দোলনে মামলা প্রত্যাহার।
✅ ১৯৭০: নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টিতে বিজয় লাভ।
✅ ২৬ মার্চ ১৯৭১: জাতির পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণার বার্তা। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তার করে।
✅ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২: পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসেন।
✅ তিনি বাংলাদেশের 'জাতির জনক' ও 'প্রথম রাষ্ট্রপতি', স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাঁকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেওয়া হয়।
✅ ১৮ অক্টোবর, ১৯৭২ সালে জুলিও কুরি শান্তি পদক লাভ করেন।
✅ মৃত্যু: ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে একদল বিপথগামী সেনাসদস্য তাঁকে পরিবারসহ হত্যা করে।

বঙ্গবীর এম. এ. জি. ওসমানী (১৯১৮-১৯৮৪)
✅ ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
✅ পুরো নাম: মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী
✅ শিক্ষা: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, পরে ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি (ডিহরাদুন)।
✅ ওসমানী ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন ১৯৩৯ সালে।
✅ তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন এবং পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
✅ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর জেনারেল পদে থাকলেও তিনি ১৯৬৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
✅ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার তাঁকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করে।
✅ তাঁর নেতৃত্ব ও কৌশলে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
✅ ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
✅ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন। তবে ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের প্রতিবাদে সংসদ সদস্য পদ ত্যাগ করেন।
✅ ১৯৭৬ সালে "জাতীয় জনতা পার্টি" প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হন।
✅ তাঁকে "বঙ্গবীর" উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাঁর অসামান্য দেশপ্রেম ও বীরত্বের জন্য।
✅ ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি পরলোক গমন করেন।

স্যার জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭)
✅ স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলার রাড়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ শিক্ষা: প্রেসিডেন্সি কলেজ (কলকাতা), ক্রাইস্টস কলেজ (কেমব্রিজ), ইউনিভার্সিটি কলেজ (লন্ডন)।
✅ পেশা: বিজ্ঞানী, অধ্যাপক, উদ্ভাবক, সাহিত্যিক।
✅ উদ্ভিদের যে জীবন আছে তিনি তা প্রথম আবিষ্কার করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে উদ্ভিদও যন্ত্রের মতো বৈদ্যুতিক সংকেতের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখায়। তিনি উদ্ভিদের অনুভূতি বুঝতে 'ক্রেসকোগ্রাফ' (Crescograph) নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন যা উদ্ভিদের ক্ষুদ্র আন্দোলন নির্ণয় করতে পারে। এই গবেষণার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন, উদ্ভিদেও স্নায়ু সিস্টেমের মতো কিছু কাজ করে।
✅ তিনি বিশ্বের প্রথম বিজ্ঞানীদের একজন যিনি রেডিও তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। মারকনি-র আগেই (১৮৯৫ সালে) তিনি রেডিও সংকেত পাঠাতে সক্ষম হন, কিন্তু তিনি নিজের আবিষ্কারের পেটেন্ট নেননি। পরে বৈজ্ঞানিক মহলে স্বীকৃতি পান এবং তাঁকে "Wireless communication"-এর অন্যতম পথিকৃৎ বলা হয়।
✅ তিনি বাংলায় বিজ্ঞানভিত্তিক লেখালেখি শুরু করেন এবং বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তার অন্যতম বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান রচনা "নিরুদ্দেশের কাহিনী" (১৮৯৬), যেটি বাংলা সাহিত্যের প্রথমদিককার সায়েন্স ফিকশন হিসেবে বিবেচিত।
✅ নাইটহুড (Knight Bachelor): ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে।
✅ রয়েল সোসাইটির ফেলো (FRS): ১৯২০ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন, যেটি ছিল একজন ভারতীয় হিসেবে বিরল সম্মান।
✅ ১৯৩৭ সালে তিনি পরলোক গমন করেন।

নবাব সলিমুল্লাহ (১৮৬৬-১৯১৫)
✅ নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকার নবাব পরিবারে ১৮৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ সলিমুল্লাহ বাংলা, ইংরেজি, আরবি ও ফারসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তাঁর শাসনামলে ঢাকা নবাব পরিবার মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
✅ ১৯০৬ সালে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
✅ নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন, যার ফলস্বরূপ ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেটিকে “East’s Oxford” বলা হয়।
✅ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে "নাইট" উপাধিতে ভূষিত করে তাঁর অবদানের জন্য।
✅ ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি পরলোক গমন করেন।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (১৮৬২-১৯৭২)
✅ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শিবপুরে ১৮৬২ সালে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জন্মগ্রহণ করেন।
✅ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ মাইহার রাজ্যের দরবার সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন এবং সেখানেই প্রতিষ্ঠা করেন মাইহার ঘরানা, যা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে এক অনন্য ঘরানা হিসেবে বিবেচিত।
✅ তিনি সরোদ ছাড়াও সেতার, সরঙ্গী, বেহালা, তবলা ও অন্যান্য বহু যন্ত্রে পারদর্শী ছিলেন।
✅ তিনি ছিলেন এক অসাধারণ গুরু। তাঁর ছাত্ররা পরে উপমহাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। তাঁর প্রধান ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন: রবিশঙ্কর (সেতারবাদক, বিশ্বখ্যাত), আলী আকবর খাঁ (তাঁর পুত্র, সরোদবাদক), অন্নপূর্ণা দেবী (কন্যা, সুরবাহারবাদিকা), পণ্ডিত নিখিল ব্যানার্জি, পণ্ডিত পন্নালাল ঘোষ (বাঁশিবাদক)।
✅ বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবন: চন্দ্রসারং, সুরশৃঙ্গার সহ নতুন যন্ত্র তৈরি।
✅ ১৯৩৫ সালে নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্করের সাথে বিশ্বভ্রমণ করে ভারতীয় রাগসঙ্গীতকে পাশ্চাত্যে পরিচিত করেন। ব্রিটিশ রানী তাঁকে "সুর সম্রাট" উপাধি দেন।
✅ পদ্মভূষণ (১৯৫৮) – ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
✅ পদ্মবিভূষণ (১৯৭১) – ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
✅ ১৯৭২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন।

এফ. আর. খান (১৯২৯-১৯৮২)
✅ তিনি ১৯৯২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ছিল মাদারীপুর জেলা।
✅ শিক্ষা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতক, আমেরিকার ইলিনয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (IIT Chicago) থেকে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচ.ডি।
✅ Structural Tube System (স্ট্রাকচারাল টিউব সিস্টেম): এটিই ছিল তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবনের বাইরের প্রাচীরকে শক্ত কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করে অনেক উঁচু ভবন নির্মাণ সম্ভব হয়-আগে যা ছিল কল্পনাতীত। তাকে “আধুনিক স্কাইস্ক্র্যাপারের জনক” (Father of Modern Skyscrapers) বলা হয়।
✅ আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস (AIA) থেকে "স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং"-এ সর্বোচ্চ সম্মাননা (১৯৭৩)।
✅ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস (RIBA) কর্তৃক "কিংস মেডেল" (১৯৮৩, মরণোত্তর)।
✅ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক "একুশে পদক" (১৯৭৬)।
✅ ২৬ মার্চ ১৯৮২ সালে জেদ্দায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সার্জেন্ট জহুরুল হক (১৯৩৫-১৯৬৯)
✅ সার্জেন্ট জহুরুল হক ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ জহুরুল হক পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে সার্জেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন।
✅ ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার "আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা" নামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহমূলক মামলা করে, যেখানে সার্জেন্ট জহুরুল হককে অন্যতম আসামি করা হয়।
✅ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, কারাবন্দি অবস্থায় ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে জহুরুল হককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
✅ তাঁর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে সারা পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র জনরোষ দেখা দেয়।
✅ তাঁর মৃত্যু ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান-কে ত্বরান্বিত করে।
✅ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির পথ সুগম হয়।
✅ অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, তাঁর শহিদ হওয়া ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথচলার অন্যতম প্রধান মাইলফলক।
✅ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে "শহীদ" উপাধিতে ভূষিত করে।

হাজী শরীয়ত উল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০)
✅ হাজী শরীয়ত উল্লাহ ১৭৮১ সালে মাদারীপুর জেলার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ শিক্ষা: স্থানীয় মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ১৭৯৯ সালে মক্কায় গমন করেন। সেখানে ২০ বছর ধরে ইসলামী আইন (ফিকহ), তাফসির, ও হাদিস বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
✅ ১৮১৮ সালে বাংলায় ফিরে তিনি দেখেন, স্থানীয় মুসলিম সমাজ হিন্দুয়ানি রীতিনীতি ও ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবে ধর্মীয়ভাবে পথভ্রষ্ট।
✅ ফারায়েজি আন্দোলন: "ফরায়েজী" শব্দটি আরবি "ফরজ" (অবশ্য পালনীয়) থেকে নেওয়া, যা আন্দোলনের মূল ভিত্তি।
✅ ইসলামের মৌলিক পাঁচটি ফরজ (নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ, ও ঈমান) পালনে জোর দেওয়া।
✅ বিদআত (অনৈসলামিক প্রথা) দূর করা, যেমন: মাজার পূজা, জন্ম-মৃত্যুতে হিন্দু সংস্কার অনুসরণ।
✅ কৃষকদের জমিদারি শোষণ ও ব্রিটিশ করের বিরুদ্ধে সংগঠিত করা।
✅ হাজী শরীয়ত উল্লাহর আন্দোলন মূলত কৃষক ও গ্রামীণ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
✅ তিনি ১৮৪০ সালে বাহাদুরপুর গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন।
✅ তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুহসিন উদ্দিন আহমদ (দুধু মিয়া) ফারায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব নেন এবং এটিকে আরও রাজনৈতিক রূপ দেন।

তিতুমীর (১৭৮২-১৮৩১)
✅ ১৭৮২ সালে চব্বিশ পরগনা জেলার চাঁদপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে তিতুমীরের জন্ম।
✅ তাঁর আসল নাম মীর নিসার আলী
✅ মুসলমান কৃষকদের উপর জমিদারদের (বিশেষত হিন্দু জমিদারদের) অত্যাচার, অতিরিক্ত খাজনা এবং ধর্মীয় নিপীড়নের প্রতিবাদে তিতুমীর নেতৃত্ব দেন।
✅ তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে বাঁশ দিয়ে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন, যা ইতিহাসে "বাঁশের কেল্লা" নামে বিখ্যাত।
✅ এটি প্রতিরক্ষা ও স্বাধীন প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে ওঠে।
✅ স্বাধীনতা ঘোষণা: তিনি নিজেকে "বাদশাহ" ঘোষণা করে চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, ও ফরিদপুরে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। প্রায় ৮৩,০০০ কৃষক তাঁর পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়।
✅ চূড়ান্ত সংঘর্ষ: ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর ব্রিটিশ সেনাবাহিনী কর্নেল হার্ডিংয়ের নেতৃত্বে বাঁশের কেল্লা ঘিরে ফেলে। তিতুমীরের সৈন্যরা তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে আধুনিক ব্রিটিশ বাহিনীর সামনে টিকতে পারেনি।
✅ শাহাদাত: ১৯ নভেম্বর তিতুমীর ও তাঁর ৪০ জন সহচর শহীদ হন। ব্রিটিশরা কেল্লা ধ্বংস করে দেয় এবং প্রধান সহযোগী গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেয়।
✅ তিতুমীর ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম শহিদদের একজন, যিনি ধর্মীয় ও সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিতুমীর হলেন স্বাধীনতা চেতনার প্রারম্ভিক মুখ।

আবু সাঈদ চৌধুরী (১৯২১-১৯৮৭)
✅ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ৩১ জানুয়ারি ১৯২১ সালে টাঙ্গাইল জেলার নাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ শিক্ষা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও আইন শিক্ষা, পরে লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি অর্জন করেন।
✅ তিনি ছিলেন একজন সুপরিচিত আইনজীবী ও বিচারক।
✅ ৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন।
✅ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাকিস্তানি নির্যাতনের প্রতিবাদে উপাচার্য পদ থেকে সরে আসেন এবং যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে কাজ করেন।
✅ ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল পুনর্নির্বাচিত হন।
✅ তিনি ছিলেন মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ কমিশনের চেয়ারম্যান, যা ছিল বাংলাদেশের জন্য বড় গৌরব।
✅ তাঁর লেখা "জন্ম আমার ধন্য হলো" একটি আত্মজীবনীমূলক বই, যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা দিক উঠে এসেছে।
✅ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক দেশিকোত্তম উপাধি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি।
✅ ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।

নওয়াব ফয়জুননেসা চৌধুরানী (১৮৩৪-১৯০৩)
✅ নওয়াব ফয়জুননেসা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসামের পশ্চিম গাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ তিনি একাধারে কবি, সমাজসেবী ও জমিদার।
✅ তিনি বাংলাদেশে নারী শিক্ষার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম।
✅ ১৮৭৩ সালে কুমিল্লার লাকসামে প্রতিষ্ঠা করেন ফয়জুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়, যা পরবর্তীতে “ফয়জুন্নেছা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ” নামে পরিচিতি পায়।
✅ নিজ উদ্যোগে ও নিজ খরচে বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন—যা সে সময়ে ছিল বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ।
✅ তাঁর রচিত "রূপজালাল" নামক দীর্ঘ কবিতা বাংলা সাহিত্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি ছিল একটি রোমান্টিক কাব্য এবং নারীর অনুভূতি ও কল্পনার জগৎ প্রকাশের একটি সাহসী পদক্ষেপ।
✅ ব্রিটিশ সরকার তাঁর সমাজসেবার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ১৮৮৯ সালে “নওয়াব” উপাধিতে ভূষিত করে।
✅ তিনি ১৯০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

অমর্ত্য সেন
✅ তিনি নভেম্বর, ১৯৩৩ সালে ভারতের শান্তি নিকেতনে জন্ম গ্রহণ করেন।
✅ শিক্ষা: প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা (অর্থনীতি)। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচডি)।
✅ কল্যাণ অর্থনীতি: দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও বৈষম্য নিয়ে গবেষণা।
✅ সামাজিক পছন্দ তত্ত্ব: গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ।
✅ মানব উন্নয়ন তত্ত্ব: অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরা।
✅ "ন্যায়ের ধারণা" (The Idea of Justice) বইয়ে ন্যায়বিচারের নতুন ব্যাখ্যা দেওয়া।
✅ উল্লেখযোগ্য বই:​ Collective Choice and Social Welfare (১৯৭০), Poverty and Famines: An Essay on Entitlement and Deprivation (১৯৮১), Development as Freedom (১৯৯৯), The Argumentative Indian (২০০৫), The Idea of Justice (২০০৯)।
✅ ১৯৯৮: অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান।
✅ ১৯৯৯: ভারত সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার 'ভারত রত্ন'।
✅ ২০০০: যুক্তরাজ্যের 'অর্ডার অফ কম্প্যানিয়ন অফ অনার'।
✅ ২০০০: বাংলাদেশ সরকারের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব​।

কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)
✅ ১৮৯৯ সালে চব্বিশ পরগনা জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
✅ তিনি ৪,০০০+ গান রচনা করেছেন, যেগুলো নজরুল গীতি নামে পরিচিত।
✅ বিখ্যাত গান: "কারার ঐ লৌহকপাট", "চল চল চল", "ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে" ইত্যাদি।
✅ "আনন্দময়ীর আগমনে" কবিতার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে জেলে পাঠায় (১৯২২)।
✅ ব্রিটিশ সরকার তাঁর লেখা ও বক্তব্যের জন্য তাঁকে বহুবার কারাবন্দি করে।
✅ তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি ও রণ সঙ্গীতের রচয়িতা।
✅ একুশে পদক (১৯৭৬, বাংলাদেশ)।
✅ পদ্মভূষণ (১৯৬০, ভারত)।
✅ ডি.লিট (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৯)।
✅ ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আবদুল গাফফার চৌধুরী (১৯৩৪-২০২২)
✅ জন্ম: ১২ ডিসেম্বর ১৯৩৪, উলানিয়া, মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত।
✅ তাঁর লেখা "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো..." গানটি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মারক ও প্রেরণার উৎস।
✅ তিনি উপন্যাস, স্মৃতিকথা, নাটক, প্রবন্ধ ও গবেষণাধর্মী বই লিখেছেন। বিখ্যাত গ্রন্থসমূহের মধ্যে আছে: পঁচিশে মার্চ, শ্রেষ্ঠ কলাম, শেখ মুজিব : ট্রায়াল অব এ ট্রাজেডি, গণহত্যার পূর্বাপর ইত্যাদি।
✅ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে কাজ করেন।
✅ একুশে পদক (১৯৮৩, বাংলাদেশ)।
✅ স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০৯, বাংলাদেশ)।
✅ বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৭)।
✅ মৃত্যু: ১৯ মে ২০২২, লন্ডন, যুক্তরাজ্য।

এ্যাঞ্জেলা গোমেজ
✅ ১৯৫২ সালে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার মোল্লা গ্রামের মঠবাড়ী মিশনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
✅ ১৯৭৫ সালে তিনি গড়ে তোলেন বাঁচতে শেখা সংগঠন।
✅ ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই তিনি এশিয়ার নোবেল বলে খ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন।
✅ তিনি দীর্ঘদিন ধরে নারী উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে তার অবদান অপরিসীম।

কায়কোবাদ (১৮৫৭-১৯৫১)
✅ জন্ম: ১৮৫৭, নবাবগঞ্জ, ঢাকা (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত)।
✅ কায়কোবাদের আসল নাম কাজেম আল কোরায়শী।
✅ তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ "মহাশ্মশান", যা ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত হয়। এটি সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) অবলম্বনে লেখা একটি ঐতিহাসিক কাব্য।
✅ কাব্যগ্রন্থসমূহ: বীরবল, কুসুম কানন, মহাশ্মশান, অমিয়ধারা, শিবমন্দির, মহররম শরীফ ইত্যাদি।
✅ "মহাশ্মশান" কাব্যকে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয়তাবাদী মহাকাব্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
✅ খান বাহাদুর উপাধি (ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক, ১৯২৬)।
✅ মৃত্যু: ২১ জুলাই ১৯৫১, ঢাকা।

গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪
✅ জন্ম: ১৮৯৭, সাতক্ষীরা, খুলনা, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত।
✅ বিখ্যাত গ্রন্থসমূহ: বিশ্বনবী, জীবন সঙ্গীত, নূরের পথে, দৃষ্টিপাত, হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি, দীপ্তি ও ছায়া ইত্যাদি।
✅ তিনি পবিত্র কুরআনের বাংলা অনুবাদ করেন ছন্দে ও গদ্যে।
✅ প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (পাকিস্তান আমলে)।
✅ মৃত্যু: ১৩ অক্টোবর ১৯৬৪, ঢাকা।

ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম (১৯১১-১৯৮৯)
✅ ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহীম ১৯১১ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার বায়েরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ তিনি ইব্রাহীম মেমোরিয়াল ডাইবেটিস হাসপাতাল (বারডেম) এর প্রতিষ্ঠাতা।
✅ স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) – ১৯৮৪।
✅ ১৯৮৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-১৯৭৬)
✅ জন্ম: ২৯ ডিসেম্বর ১৯১৪, ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ উপজেলায়।
✅ তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে 'ম্যাডোনা ১৯৪৩', 'দাঁড়টান', 'গ্রামীণ রমণী', 'দুই জিপসী রমণী', 'রমণীর চুল বাঁধা', ও 'মনপুরা খওর' অন্যতম।
✅ তিনি চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট এবং সোনারগাঁয়ের লোকশিল্প যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা।
✅ একুশে পদক – ১৯৭৭ (মরণোত্তর)।
✅ স্বাধীনতা পদক – ১৯৯৩ (মরণোত্তর)।
✅ ২৮ মে ১৯৭৬ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আব্বাস উদ্দিন আহমদ (১৯০১-১৯৫৯)
✅ জন্ম: ২৭ অক্টোবর ১৯০১, তুফানগঞ্জ, কুচবিহার (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ)।
✅ গ্রামবাংলার পল্লীগীতির তিনি অমর শিল্পী।
✅ ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, মারফতি, জারি গানের প্রবাদপুরুষ।
✅ উল্লেখযোগ্য গান: "আমার সোনার ময়না পাখি" (ভাটিয়ালি), "ফান্দে পড়িয়া বগা কাঁদে" (জারিগান), "মহাজনে দেওয়ান বলিয়া" (মুর্শিদি), "নদীর কূল নাইকো আমার" (ভাটিয়ালি)।
✅ একুশে পদক (মরণোত্তর) – ১৯৮১।
✅ মৃত্যু: ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৯, ঢাকা।

আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দীন (১৯৩০-১৯৯৮)
✅ শিক্ষা: ১ জানুয়ারি ১৯৩০ সিরাজগঞ্জ।
✅ শিক্ষা: স্নাতক (B.Sc.): রাজশাহী কলেজ, স্নাতকোত্তর (M.Sc.): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পদার্থবিজ্ঞান, পিএইচ.ডি.: ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, শিক্ষা বিষয়ে।
✅ সাগরের রহস্যপুরী, বিজ্ঞান ও মানুষ, আবিষ্কারের নেশায়, অবাক পৃথিবী, রহস্যের শেষ নেই, এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে ইত্যাদি গ্রন্থের জন্য তিনি প্রসিদ্ধ।
✅ একুশে পদক (১৯৮৪)।
✅ ২৫ ডিসেম্বর ১৯৯৮ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

জহির রায়হান (১৯৩৩-১৯৭২)
✅ জন্ম: ১৯ আগস্ট ১৯৩৫, ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে।
✅ জহির রায়হান একাধারে বিশিষ্ট লেখক ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক।
✅ উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র: স্টপ জেনোসাইড, জীবন থেকে নেয়া, বাহানা, আনোয়ারা।
✅ উপন্যাস: হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী।
✅ ছোটগল্প: সূর্য গ্রহণ, সময় বহে যায়।
✅ পুরস্কার ও সম্মাননা: নিগার পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (মরণোত্তর), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১২, মরণোত্তর)।
✅ ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২: ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে মিরপুরে নিখোঁজ হন।
✅ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭২ সালে নিহত বলে ঘোষণা করা হয়।

জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)
✅ জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালে বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
✅ কাব্যগ্রন্থ: ধ্বংসের মধ্যে দাঁড়িয়ে, রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির।
✅ আধুনিক জীবনবোধ, নির্জনতা, সময়চেতনা, হতাশা ও মানবতাবোধ—সব মিলিয়ে তাঁর কবিতা ছিল গভীর, আত্মসন্ধানী ও দার্শনিক।
✅ বিখ্যাত উক্তি: “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর…”।
✅ মৃত্যু: ২২ অক্টোবর ১৯৫৪, কলকাতা (রাস্তায় ট্রামের ধাক্কায় আহত হয়ে মারা যান)।

বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (১৮৮০-১৯৩২)
✅ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ১৮৮০ সালে রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ছিলেন বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত, সমাজসংস্কারক, শিক্ষাবিদ, লেখিকা ও নারীবাদের পথিকৃৎ।
✅ তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হচ্ছে 'মতিচুর', সুলতানার স্বপ্ন', অবরোধ বাসিনী' ইত্যাদি।
✅ বেগম রোকেয়ার জন্মদিন (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে "রোকেয়া দিবস" হিসেবে পালিত হয়।
✅ তাঁর নামে “রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
✅ উদ্ধৃতি: “যে জাতি নিজের মেয়েদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে পারে না, সে জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না।”
✅ ৯ ডিসেম্বর ১৯৩২ (৫২তম জন্মদিনে) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮–১৯৫৬)
✅ জন্ম: ১৯ মে ১৯০৮, সাঁওতাল পরগনার দুমকা (বর্তমান ঝাড়খণ্ড)।
✅ পূর্ণ নাম: প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
✅ তাঁর উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে পদ্মা নদীর মাঝি, পুতুল নাচের ইতিকথা, শহর তলী, জীয়ন্ত, জননী, সোনার চেয়ে দামী ইত্যাদি।
✅ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে "সাহিত্যের ভবিষ্যৎ" বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
✅ মৃত্যু: ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬, কলকাতা।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩)
✅ জন্ম: ২৫ জানুয়ারি ১৮২৪, যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে (বর্তমান বাংলাদেশ)।
✅ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার অগ্রদূত, বাংলা মহাকাব্যের স্রষ্টা, এবং বাংলা নাটক, কবিতা ও চিঠিপত্র সাহিত্যে এক অসাধারণ বৈপ্লবিক প্রতিভা।
✅ শর্মিষ্ঠা, কুষ্ণকুমারী, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো, মেঘনাদ বধ কাব্য তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি।
✅ বাংলা সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ (blank verse)-এর প্রবর্তক।
✅ মৃত্যু: ২৯ জুন ১৮৭৩, কলকাতা।

মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২)
✅ জন্ম: ১৩ নভেম্বর ১৮৪৭, কুষ্টিয়া জেলার লাহিনীপাড়া গ্রামে (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারত, বর্তমান বাংলাদেশ)।
✅ মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার।
✅ জমীদার দর্পণ, বিষাদ সিন্ধু, গাজী মিয়ার বস্তানী, উদাসীন রত্নাবতী ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা।
✅ উদ্ধৃতি: “যাহারা সত্য ও ন্যায়ের জন্য প্রাণ দিয়া শহীদ হয়, তাহারাই প্রকৃত বীর।”
✅ মৃত্যু: ১৯ ডিসেম্বর ১৯১২ পদমদী, নবাবপুর, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী।

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১)
✅ জন্ম: ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬, বরিশাল জেলার আমানতগঞ্জে।
✅ ৭০-৮০ দশকের বাংলা কবিতার যুগসন্ধির কবি।
✅ বিদ্রোহ, মার্কসীয় চেতনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কণ্ঠস্বর।
✅ গীতিকবিতা ও গণসংগীতের সফল রূপকার।
✅ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- মানুষের মানচিত্র, ছোবল, ফিরে চাই স্বর্ণ গ্রাম, উপদ্রুত উপকূল, মৌলিক মুখোশ, বিষ বৃক্ষের বীজ ইত্যাদি।
✅ মৃত্যু: ২১ জুন ১৯৯১, মাত্র ৩৪ বছর বয়সে।

শহিদুল্লাহ কায়সার (১৯২৭-১৯৭১)
✅ জন্ম: ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭, ফেনী জেলা।
✅ পূর্ণ নাম: আবু নাঈম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ (সাহিত্যিক নামে: শহিদুল্লাহ কায়সার)।
✅ উপন্যাস: সংশপ্তক, সারেং বৌ, দীর্ঘদিন ধরে, সংঘর্ষ, সমুদ্রের স্বাদ (অসমাপ্ত)।
✅ একুশে পদক (১৯৮৩, মরণোত্তর)।
✅ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (২০০৮, মরণোত্তর)।
✅ মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক অপহৃত ও শহিদ)।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ (১৯২২-১৯৭১)
✅ জন্ম: আগস্ট ১৫, ১৯২২ ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
✅ আধুনিক বাংলা উপন্যাসের পথিকৃৎ।
✅ উপন্যাস: লালসালু, চাঁদের অমাবস্যা, কাঁদো নদী কাঁদো।
✅ নাটক: তরঙ্গভঙ্গ, উজান।
✅ ছোটগল্প: নয়নচারা, সমুদ্র ও তৃষ্ণা।
✅ বিবিসি বাংলা বিভাগের সম্পাদক (১৯৫১-১৯৬০)।
✅ ইউনেস্কোতে কর্মরত (১৯৬০-১৯৭১)।
✅ আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬১)।
✅ বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১)।
✅ মরণোত্তর একুশে পদক (১৯৮৪)।
✅ মৃত্যু: ১০ অক্টোবর ১৯৭১, প্যারিস, ফ্রান্স।

সৈয়দ আলী আহসান (১৯২২-২০০২)
✅ সৈয়দ আলী আহসান ২৬ মার্চ, ১৯২২ সালে মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ কাব্যগ্রন্থ: চতুরঙ্গ, একক সন্ধ্যায় বসন্ত, উত্তরাধিকার।
✅ সমালোচনা গ্রন্থ: কাব্যের কথা, মধুসূদন: জীবন ও কাব্য, রবীন্দ্রনাথ: শিল্প ও দর্শন।
✅ অনুবাদ: কুরআন শরীফ (বাংলা অনুবাদ), রুমীর কবিতা (ফারসি থেকে বাংলা)।
✅ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬১)।
✅ একুশে পদক (১৯৮২)।
✅ স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭)।
✅ ২৫ জুলাই ২০০২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

খান জাহান আলী (১৩৬৯-১৪৫৯)
✅ জন্ম: ১৩৬৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে (জন্মস্থান অজানা, তবে অনেকে তুর্কি বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত বলে মনে করেন)।
✅ প্রকৃত নাম: উলুঘ খান জাহান।
✅ স্থাপত্যকীর্তি:
✔ ষাটগম্বুজ মসজিদ (বাগেরহাট) - ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য,
✔ খান জাহান আলীর মাজার,
✔ সিংগাইর মসজিদ,
✔ বিবি বেগনী মসজিদ,
✔ চুনাখোলা মসজিদ,
✔ নয়গম্বুজ মসজিদ,
✔ খাঞ্জেলী দীঘি (প্রায় ২০০ একর আয়তন)।
✅ ইসলাম প্রচার: সুফি ধারায় ইসলাম প্রসার।
✅ মৃত্যু: ২৫ অক্টোবর ১৪৫৯, বাগেরহাট (বর্তমান বাংলাদেশ)।

কামরুল হাসান (১৯২১-১৯৮৮)
✅ জন্ম: ২ ডিসেম্বর ১৯২১, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত।
✅ উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম: সংগ্রাম, মাতৃত্ব, জেলখানার ভেতর, জয়বাংলা, একাত্তরের গণহত্যার প্রতিবাদমূলক পোস্টার ও কার্টুন।
✅ বাংলাদেশের আধুনিক চিত্রকলার অগ্রদূত।
✅ জাতীয় পতাকার রূপকার (১৯৭১)।
✅ লোকশিল্প ও আধুনিকতার সমন্বয়কারী।
✅ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (১৯৭৩-১৯৮৪)।
✅ একুশে পদক (১৯৭৭)।
✅ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯)।
✅ জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার (১৯৮০)।
✅ মৃত্যু: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮, ঢাকা।

হীরালাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭)
✅ বাংলা চলচ্চিত্রের জনক হীরালাল সেন ১৮৬৬ সালে মানিকগঞ্জের বগজুরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
✅ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা।
✅ বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার জনক হিসাবে স্বীকৃত।
✅ ১৮৯৮ সালে কলকাতায় 'রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি' প্রতিষ্ঠা।
✅ মোবাইল সিনেমাটোগ্রাফি চালু করেন।
✅ বাংলা নাটক থেকে চলচ্চিত্র রূপান্তরের পথিকৃৎ।
✅ প্রথম সংবাদচিত্র ধারণকারী (১৯০১ সালের দিল্লি দরবার)।
✅ ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের পথপ্রদর্শক।
✅ নির্বাক যুগের অগ্রণী নির্মাতা।
✅ তার "রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি" ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম চলচ্চিত্র স্টুডিও।
✅ মৃত্যু: ১৯১৭ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আরজ আলী মাতুব্বর (১৯০০-১৯৮৫)
✅ জন্ম: ১৭ ডিসেম্বর ১৯০০, লাহারকান্দি, বরিশাল।
✅ শিক্ষা: প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ না পেলেও তিনি স্বশিক্ষিত ছিলেন।
✅ তাঁর আলোচিত বইগুলো হলো: সত্যের সন্ধানে, সৃষ্টি রহস্য, আত্মার সন্ধানে, আত্মচিন্তা, দার্শনিক চিন্তা।
✅ তাঁর বিখ্যাত উক্তি:
✔ “ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হন, তবে তিনি কেন দুঃখ সৃষ্টি করেন?”
✔ “আত্মা যদি অশরীরী হয়, তবে সে দেহ ছাড়া কীভাবে কাজ করে?”
✔ “ধর্ম যদি সত্য হয়, তবে এত বিভেদ কেন?”
✅ আরজ আলী মাতুব্বর ছিলেন বাংলার সেই সাহসী প্রশ্নকর্তা, যিনি নিজেই বলতেন-"অন্ধবিশ্বাস নয়, চিন্তা করে দেখো।"
✅ তিনি প্রমাণ করে গেছেন যে জ্ঞান অর্জনের জন্য ডিগ্রি নয়, দরকার শুধুই জিজ্ঞাসা ও সাহস।
✅ মৃত্যু: ১৫ মার্চ ১৯৮৫।

ব্রজেন দাশ (১৯২৭-১৯৯৮)
✅ ব্রজেন দাশ ১৯২৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিক্রমপুরের কুচিয়ামোড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
🏊 ইংলিশ চ্যানেল জয়:
✅তারিখ: ১৮ আগস্ট ১৯৫৮।
✅স্থান: ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মাঝখানে অবস্থিত ইংলিশ চ্যানেল।
✅সময় লেগেছিল: প্রায় ১৪ ঘণ্টা ২৬ মিনিটে সাঁতার কেটে এই চ্যানেল পার করেন।
✅তিনি ছিলেন:
✅ প্রথম বাঙালি।
✅ প্রথম দক্ষিণ এশীয়।
✅ বিশ্বের ৪৪তম ব্যক্তি যিনি ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন।
✅ ব্রজেন দাশ ছিলেন সেই মানুষ, যিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন-সীমা বলে কিছু নেই, যদি সাহস ও সাধনা থাকে।
✅ মৃত্যু: ১৯৯৮।

সত্যজিৎ রায় (১৯২১-১৯৯২)
✅ জন্ম: ২ মে ১৯২১, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত।
✅ উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ: পথের পাঁচালী (১৯৫৫), অপরাজিত (১৯৫৬), অপুর সংসার (১৯৫৯), চারুলতা (১৯৬৪), জলসাঘর, অশনিসংকেত, মহানগর, নায়ক, অরণ্যের দিনরাত্রি।
✅ ফেলুদা সিরিজের স্রষ্টা।
✅ প্রফেসর শঙ্কু সিরিজের স্রষ্টা।
✅ বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিচালক।
✅ ভারতীয় চলচ্চিত্রকে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেন।
✅ অস্কার (১৯৯২, সম্মানসূচক)।
✅ ভারতরত্ন (১৯৯২)।
✅ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৪)।
✅ মৃত্যু: ২৩ এপ্রিল ১৯৯২, কলকাতা।

শওকত ওসমান (১৯১৭-১৯৯৮)
✅ জন্ম: ২ জানুয়ারি ১৯১৭, হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত।
✅ পূর্ণ নাম: শেখ আজিজুর রহমান।
✅ বিখ্যাত উপন্যাসসমূহ: ক্রীতদাসের হাসি (১৯৬২), জাহান্নাম হইতে বিদায়, নীলদর্পণ (অনুবাদ), চতুষ্পথে চতুষ্পদ, পূর্বরাত্রি পূর্বদিন, রাজা উপাখ্যান।
✅ একুশে পদক (১৯৮৩)।
✅ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬২)।
✅ স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৭)-বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান।
✅ আনন্দ পুরস্কার (ভারত)।
✅ মৃত্যু: ১৪ মে ১৯৯৮, ঢাকা, বাংলাদেশ।

জসীম উদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬)
✅ জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯০৩, তাম্বুলখানা, ফরিদপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)।
✅ উপাধি: পল্লীকবি।
✅ বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ: নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৮), সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩), রাখালী, বালুচর, ধানের গন্ধ, মধুমালা, বলধা গার্ডেন।
✅ লোকজ জীবন ও সংস্কৃতির কাব্যিক রূপকার।
✅ গীতিকবিতার অসামান্য শিল্পী।
✅ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক।
✅ ঢাকা বেতারের পরিচালক।
✅ পাকিস্তান সরকারের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা।
✅ লোকসাহিত্যকে আধুনিক সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিতকারী।
✅ প্রেসিডেন্টস প্রাইড অব পারফরম্যান্স (পাকিস্তান, ১৯৫৮)।
✅ একুশে পদক (১৯৭৬, মরণোত্তর)।
✅ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৮, মরণোত্তর)।
✅ মৃত্যু: ১৪ মার্চ ১৯৭৬, ঢাকা।

ড. মুহম্মদ ইউনূস
✅ জন্ম: ২৮ জুন ১৯৪০, চট্টগ্রাম, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)।
✅ শিক্ষা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক, Vanderbilt University, USA থেকে পিএইচ.ডি (অর্থনীতি)।
✅ ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে প্রথম ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম শুরু করেন।
✅ ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক।
✅ ব্যাংকটি গরিব, ভূমিহীন, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে সুদবিহীন ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া শুরু করে।
✅ মাইক্রোক্রেডিট ধারণার জনক।
✅ গ্রামীণ ফোন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা।
✅ ইউনূস সেন্টার (সামাজিক উদ্যোগ গবেষণা কেন্দ্র)।
✅ দারিদ্র্য বিমোচনের বৈশ্বিক আইকন।
✅ নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত।
✅ ড. ইউনূস শুধু বাংলাদেশের নন, সমগ্র বিশ্বের দারিদ্র্য বিমোচনের প্রতীক। তার মাইক্রোক্রেডিট মডেল আজ ১০০+ দেশে প্রয়োগ করা হয়েছে।
✅ "সামাজিক ব্যবসা" ধারণা তার সবচেয়ে বড় অবদান, যা মুনাফা নয়, মানুষের কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়।
🏆 নোবেল শান্তি পুরস্কার (২০০৬) – গ্রামীণ ব্যাংকসহ যৌথভাবে।
🏅 রাষ্ট্রপতি পদক, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পুরস্কার।
🌍 United Nations Foundation Award, World Food Prize, King Hussein Humanitarian Award।
🌐 ৫০টিরও বেশি দেশের সম্মাননা ও ডিগ্রি।

বেগম সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯)
✅ জন্ম: ২০ জুন ১৯১১, বরিশালের শায়েস্তাবাদে।
✅ প্রথম মুসলিম নারী কবি যিনি বাংলা কবিতায় আধুনিকতার সূচনা করেন।
✅ "কেয়ার কাঁটা" (১৯৩৮) তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ।
✅ "মায়ের কাজল", "মন ও জীবন"-এর মতো কালজয়ী রচনার স্রষ্টা।
✅ ১৯৪৭ সালে "বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ" প্রতিষ্ঠা করেন।
✅ ভাষা আন্দোলন (১৯৫২) ও মুক্তিযুদ্ধে (১৯৭১) সক্রিয় অংশগ্রহণ।
✅ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব।
✅ কাব্যগ্রন্থ: কেয়ার কাঁটা (১৯৩৮), মায়ের কাজল, মন ও জীবন (১৯৬৭)।
✅ আত্মজীবনী: একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯)।
✅ শিশুসাহিত্য: ঠাকুরমার ঝুলি (১৯৫১)।
✅ একুশে পদক (১৯৭৬)।
✅ বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬২)।
✅ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭)।
✅ জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫)।
✅ ২০ নভেম্বর ১৯৯৯, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯)
✅ জন্ম: ১০ জুলাই ১৮৮৫, পায়রা, ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারত।
✅ পিএইচ.ডি করেছেন সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়, প্যারিস থেকে – তিনি ছিলেন প্রথম মুসলিম যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
✅ সাহিত্য ও ভাষাবিজ্ঞান সম্পর্কিত রচনা: বাংলা সাহিত্যের কথা, চর্যাগীতিকা (সম্পাদনা ও ভাষ্য), বাংলা ভাষার ইতিহাস, ইসলাম ও বাঙ্গালা সাহিত্য।
✅ বাংলা ভাষার প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যাকরণ রচনা।
✅ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন "চর্যাপদ" সম্পাদনা ও অনুবাদ।
✅ "বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান" প্রণয়ন।
✅ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন।
✅ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান।
✅ বাংলা একাডেমির সভাপতি (১৯৫৬–১৯৬৯)।
✅ ইসলামিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
✅ বাংলা ভাষার প্রথম বিজ্ঞানসম্মত গবেষক।
✅ বহুভাষাবিদ পণ্ডিত (২২টি ভাষায় দক্ষ)।
✅ সাহিত্য ও সংস্কৃতির সমন্বয়কারী।
✅ বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
✅ একুশে পদক (মরণোত্তর)।
✅ মৃত্যু: ১৩ জুলাই ১৯৬৯, ঢাকা, বাংলাদেশ।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭)
✅ জন্ম: ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩, গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে।
✅ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মধ্যবিত্তের ট্র্যাজেডির নিপুণ শিল্পী।
✅ ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষক।
✅ ভাষাশৈলীতে লোকজ উপাদান ও আধুনিকতার সমন্বয়।
✅ উপন্যাস: "চিলেকোঠার সেপাই" (১৯৮৭), "খোয়াবনামা" (১৯৯৬)।
✅ ছোটগল্প সংকলন: "অন্য ঘরে অন্য স্বর" (১৯৭৬), "খোঁয়ারি" (১৯৮২), "দুধভাতে উৎপাত" (১৯৮৫)।
✅ "চিলেকোঠার সেপাই" উপন্যাসের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৩)।
✅ "খোয়াবনামা" উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৬)।
✅ কথাসাহিত্যে নতুন ধারা সৃষ্টির জন্য সাহিত্যিক সম্মাননা।
✅ ৪ জানুয়ারি ১৯৯৭, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

অতীশ দীপঙ্কর (৯৮২–১০৫৪)
✅ জন্ম: ৯৮২ খ্রিস্টাব্দ, বজ্রযোগিনী, বিক্রমপুর, বাংলাদেশ।
✅ উপাধি: দীপঙ্কর (“জ্ঞান-প্রদীপ”), শ্রীজ্ঞান।
✅ ছোটবেলায় নালন্দা মহাবিহার ও পরে বিক্রমশীলা মহাবিহারে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
✅ প্রায় ৭২ জন পণ্ডিতের কাছে শিক্ষালাভ করেন।
✅ ৫০টিরও বেশি ভাষায় দক্ষ ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
✅ ১০৪০ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতের রাজা জ্যাংচুয়ুব ও'র আমন্ত্রণে তিব্বতে যান।
✅ সেখানে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটান।
✅ তিনি ছিলেন ভারত-তিব্বত সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের অন্যতম সেতুবন্ধন।
✅ বাংলাদেশের একজন আন্তর্জাতিক মর্যাদাসম্পন্ন জ্ঞানতাপস।
✅ বিক্রমপুরে তাঁর নামে “অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” স্থাপিত হয়েছে।
✅ তিনি শুধু ধর্মগুরু নন, একজন দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদও ছিলেন। তার রচনাবলী আজও বৌদ্ধধর্ম চর্চার মৌলিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
✅ মৃত্যু: ১০৫৪ খ্রিস্টাব্দ, তিব্বত।

top
Back
Home
Gsearch